ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩, ৩০ ফাল্গুন ১৪২৯
FacebookGoogleTwRSS
খোঁজ করুন…
24updatenews
প্রচ্ছদ / খেলা / বিস্তারিত
ইংল্যান্ডকে ৩-০ তে উড়িয়ে দিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ২০২৩ মার্চ ১৪ ১৮:২৪:৫১
ইংল্যান্ডকে ৩-০ তে উড়িয়ে দিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ
চলছে বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে সিরিজের দুইটি ম্যাচ। পর পর দুইটি ম্যাচ জিতে নিয়ে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ইতিহাস করা হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করার হাতছানি টাইগারদের সামনে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বয়স হয়ে গেছে দুই দশক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতেও দুই দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে টাইগারদের। এই সিরিজ জয় তাই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করে নতুন ইতিহাস গড়লো টাইগাররা।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয় ২০১২ সালে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই সিরিজেই তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিয়েছে মুশফিকুর রহিমের দল। ২০২০ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে ও গত বছর দুবাইয়ে আরব আমিরাতকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা।
টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অভিষেক হচ্ছে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের। একাদশে ফিরেছেন শামীম হোসেনও। এ দুজনকে জায়গা করে দিয়েছেন আফিফ হোসেন ও নাসুম আহমেদ। অপরিবর্তিত আছে ইংল্যান্ড একাদশ। মানে কোনো ম্যাচ না খেলেই সফর শেষ করলেন বাঁহাতি পেসার রিস টপলি।
ইংল্যান্ডের ইনিংস বিবরণ:
প্রথম বলে চার মেরে শুরু করেছিলেন ডেভিড ম্যালান, এক বল পরই তানভীরের শিকার ফিল সল্ট। রাউন্ড দা উইকেট থেকে করা বলটা টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, ড্রাইভ করতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন সল্ট। উইকেটের পেছনে বাকি কাজটা সেরেছেন লিটন, প্রথম ওভারেই প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা পেয়ে গেলেন তানভীর। এরপর করেছেন এক হাতে মুখ চেপে আরেক হাতে আঙুল উঁচিয়ে করা উদ্যাপন, যে উদ্যাপন নিয়মিত দেখা গিয়েছিল সর্বশেষ বিপিএলে।
স্লো বাউন্সার, পুল করতে গিয়ে ঠিক ব্যাটে-বলে করতে পারেননি ম্যালান। উইকেটের পেছনে লিটন দাস নিয়েছেন সহজ ক্যাচ। ৪৭ বলে ৫৩ রান করে ফিরেছেন ম্যালান।
এ উইকেটেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট পূর্ণ হয়ে গেল মোস্তাফিজের। সব মিলিয়ে মোস্তাফিজের আগে এ কীর্তি আছে মাত্র পাঁচ জনের—টিম সাউদি, সাকিব, রশিদ খান, ইশ সোধি ও লাসিথ মালিঙ্গা।
ম্যালান আউট, ঠিক পরের বলে আউট বাটলারও। মোস্তাফিজের লেংথ বলটা পয়েন্টে খেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়েছিলেন বেন ডাকেট, সাড়াও দিয়েছিলেন বাটলার। তবে মিরাজের সরাসরি থ্রোয়ে ভেঙেছে স্টাম্প। জেগে উঠেছে মিরপুর, আবারও গুচ্ছাকারে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেছে ইংল্যান্ড! ইংল্যান্ড অধিনায়ক থেমেছেন ৩১ বলে ৪০ রান করে।
তাসকিন আর স্লোয়ারের দিকে এগোননি, সফলও হয়েছেন তাতেই। লেংথ থেকে ঘুরিয়ে মিডউইকেট পার করতে গিয়ে সীমানার ওপর মিরাজের হাতে ধরা পড়েছেন মঈন আলী, ১০ বলে ৯ রান করেই।
তাসকিনের ফুললেংথের বল, ডাকেট মিস করে গেছেন পুরো। উপড়ে গেছে অফ স্টাম্প। এ ওভারের শুরুতেও একটু পিছিয়েই হয়তো ছিল বাংলাদেশ, তবে এখন স্বাগতিকদের পরিষ্কার ফেবারিট বানিয়ে দিলেন তাসকিন। ১৮ বলে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ঠিক দ্বিগুণ ৩৬ রান।
১৯তম ওভারে নিজেকে এনেছেন সাকিব, ব্যাকফুটে গিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তানভীরের হাতে ধরা পড়েছেন স্যাম কারেন।
বাংলাদেশের ইনিংস বিবরণ:
করেছিলেন রিভার্স সুইপ, কিন্তু ফিরতি ক্যাচ গেছে বোলারের কাছে! আদিল রশিদের বলে অদ্ভুতভাবে আউট হয়েছেন রনি তালুকদার। ১৭ রানে জীবন পাওয়া বাংলাদেশ ওপেনার থেমেছেন ২৪ রানে, ৫৫ রানে ভেঙেছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি।
১৫ বল ধরে নেই বাউন্ডারি, লিটন ফিরলেন সে চাপেই। জর্দানকে পুল করেছিলেন, তবে মিডউইকেটে থাকা ফিল সল্টকে পার করাতে পারেননি। ৫১ রানে জীবন পাওয়া লিটন থামলেন ৭৩ রানে। শেষ পর্যন্ত থাকলে হয়তো সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও থাকতো ভালোভাবেই। তবে রান খুঁজে ফেরা লিটন ৭৩ রানের ইনিংসে দারুণ খুশিই হওয়ার কথা। খুশি হওয়ার কথা বাংলাদেশেরও। যদিও ইংল্যান্ড তৈরি করছে চাপ।
১৫ ওভারশেষেও বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১৩১ রান। তবে তারা থামল ১৫৮ রানেই। মানে শেষ ৫ ওভারে এসেছে মাত্র ২৭ রান, এ সময়ে বাংলাদেশ মারতে পেরেছে মাত্র একটি বাউন্ডারি—জর্ডানকে ফ্লিক করে মেরেছিলেন নাজমুল। চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রায় একইরকম অবস্থা ছিল ইংল্যান্ডেরও।
সিরিজে প্রথমবারের মতো টসে হেরে ব্যাটিংয়ে আসা বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন লিটন দাস ও রনি তালুকদার। লিটন এরপর পেয়েছেন ফিফটির দেখা, ইংল্যান্ডের পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে বড়ও করেন ইনিংস। দারুণ ফর্মে থাকা নাজমুলও শুরুটা করেছিলেন ঝোড়ো। তবে বাংলাদেশ স্কোরটা সেভাবে বড় করতে পারল না। প্রথম ২১ বলে ৩২ রান করা নাজমুল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রানে। সাকিব ৬ বল খেলে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি।
পাওয়ারপ্লেতে ২ ওভার করা রশিদ ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২৩ রান। উইকেটের দেখা পেয়েছেন জর্ডানু, ৩ ওভারে তিনি দিয়েছেন ২১ রান।
টার্গেট: জয়ের জন্য ইংল্যান্ডকে ১৫৯ রান করতে হবে।
ফলাফল: ১৬ রানে জয় লাভ করলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ৩, ইংল্যান্ড ০ :
শেষ ওভারে প্রয়োজন ২৭ রান। প্রথম বল লো ফুলটস, লং অফ দিয়ে চার ওকসের। দ্বিতীয় বলে অফ স্টাম্প বরাবর ব্লকহোলে, এবার পয়েন্ট দিয়ে চার। তৃতীয় বল অফ স্টাম্পের বাইরে স্লোয়ার, ব্যাটে বলে করতে পারেননি ওকস, বাই থেকে ১ রান। চতুর্থ বল একই লাইন, আবার মিস, আবার বাই থেকে ১ রান। পঞ্চম বল আবার স্লোয়ার, এবার আর বাইয়ের জন্যও দৌড়াননি ক্রিস ওকস। শেষ বলও ডট। বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী, সিরিজ ৩-০-তে জয়ী!
ইংল্যান্ড একাদশ
ফিল সল্ট, ডেভিড ম্যালান, জস বাটলার (অধিনায়ক), বেন ডাকেট, মঈন আলী, স্যাম কারেন, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ, রেহান আহমেদ ও জফরা আর্চার।
বাংলাদেশ একাদশ
লিটন দাস, রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানভীর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।