টি২০ ফরম্যাট মানেই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য বড় যন্ত্রণার নাম। এই ফরম্যাটে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। এর কারণ বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের কম কম টি২০ ফরম্যাটে খেলা।





একটাই মাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর বিপিএল টি২০ খেলার সুযোগ থাকলেও যে ধরনের উইকেটে খেলা হয় তাতে ব্যাটার-বোলারদের আহামরি কোনো উন্নতি হয় না। তার প্রমাণ পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলতে নামলে। তবে নিয়মিত দেশের বাইরের দুই বা ততোধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেন সাকিব আল হাসান।





মুস্তাফিজুর রহমানও এখন নিয়মিত হয়েছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ও পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল)। গতবার আইপিএলে নাম দিলেও নিলামে ওঠেননি তাসকিন আহমেদ ও লিটন কুমার দাস।
বর্তমানে এ দুজন আছেন ফর্মের তুঙ্গে। এবার কি তারা আইপিএল নিলামে উঠে দল পাবেন? এবার অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় টি২০ আসর আইপিএলে খেলার সুযোগ পাবেন এবার ডানহাতি পেসার তাসকিন ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন।





সর্বশেষ আইপিএলে নিলামের জন্য নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ৫ ক্রিকেটার। কিন্তু সাকিব ও মুস্তাফিজ ব্যতীত নিলামেই নাম ওঠেনি শরিফুল ইসলাম, তাসকিন ও লিটনের। পরবর্তীতে অবশ্য বদলি হিসেবে তাসকিনকে লখনৌ সুপার জায়ান্টস নেওয়ার আগ্রহ দেখায়।
কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) দেওয়া হয়নি। এবারের আইপিএলে তাসকিনকে দলে নিতে বেশি আগ্রহ থাকবে লখনৌ সুপার জায়ান্টস। ২০১১ সালের পর প্রথমবার গত আসরে নিলামে উঠলেও দল পাননি সাকিব।





খেলেছেন শুধু মুস্তাফিজ। কিন্তু এবার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত বোলিং করে আবার তাসকিন নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নতুন বলে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের পাশাপাশি উইকেট শিকারের দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। আর সে কারণে এবার এই ডানহাতি পেসারকে
নিয়ে আইপিএল নিলামে বড় আগ্রহ থাকতে পারে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর। এবার ১০ দল ৯৫ কোটি রুপি নিয়ে নিলামে যোগ দেবে পছন্দের ক্রিকেটারকে দলে ভেড়াতে। ২৩ ডিসেম্বর হতে পারে পরবর্তী আইপিএল নিলাম।





সেখানে তাসকিনের প্রতি বেশি মনোযোগ থাকবে দলগুলোর এমনটাই ভারতীয় গণমাধ্যমসহ সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটাররা বলছেন। তাসকিন এই বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন। তার গড় ১৬.৩৭ এবং ওভারপ্রতি রান খরচা করেছেন মাত্র ৭.২৭ হারে। ৩টি ম্যাচেই তিনি প্রথম ওভারে উইকেট নিয়েছেন।
এছাড়া বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজেও দারুণ বোলিং করেছেন তাসকিন। লিটন গত আইপিএল থেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নজরে আছেন। তিন ফরম্যাটেই এ ডানহাতি টপঅর্ডার ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছেন। গত বছরের শেষভাগে ফর্মহীনতায় ভুগেছেন। সে কারণেই হয়তো শেষ পর্যন্ত নিলামে তার নামই ডাকা হয়নি। তবে এবার লিটনের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকবে দলগুলোর। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্স এই উইকেট রক্ষক ব্যাটারকে দলে নিতে বেশি আগ্রহ থাকবে।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের উইকেট রক্ষক স্যাম বিলিংস বর্তমানে অফ ফর্মে, এছাড়াও নাইট রাইডার্স একজন ভালো উইকেট রক্ষক কে দলে নিতে চাইবে। কারণ ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এই বিশ্বকাপে অবশ্য ৫ ম্যাচের দুটিতে রান পেয়েছেন।
ভারতের বিপক্ষে ২৭ বলে ৭ চার, ৩ ছয়ে করা বিস্ফোরক ইনিংস তার টি২০ ফরম্যাটে বিধ্বংসী হওয়ার সক্ষমতাকে প্রমাণ করেছে। এ বছর তিনি টি২০ ফরম্যাটে ১৯ ম্যাচ খেলে ২৮.৬৩ গড়ে করেছেন ৪ ফিফটিতে ৫৪৪ রান। স্ট্রাইকরেটও দুর্দান্ত ১৪০.২০। এসবই জানান দিচ্ছে তাকে এবার আইপিএল দলগুলো নেওয়ার জন্য আগ্রহী হতে পারে।
আইপিএলে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের প্রতিনিধিত্ব আফগানিস্তান থেকেও কম। এর কারণ এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের খুবই খারাপ অবস্থা। হংকং, হল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের মতো সহযোগী সদস্য দেশগুলোর কাছেও হেরেছে বাংলাদেশ।
আর নিকটতম শক্তি জিম্বাবুুয়ের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে পারলেও বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে আফগানিস্তান। বর্তমান সময়ে আফগানদের কাছে ধারাবাহিকভাবেই পরাজয় যেন অমোঘ নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর সেজন্যই আফগানরা নিয়মিত আইপিএলসহ বিশ্বের শীর্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ আসরগুলোয় নিয়মিত খেলেন। আর খেলতে খেলতে নিজেদের উন্নতিও করেছেন ব্যাপকভাবে। প্রতিটি লিগের অন্তত ১৫-২০ জন আফগান নিলামে থাকেন এবং দল পান ৫-৭ জন।
বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের একমাত্র জায়গা বিপিএল। যেই আসরটি ক্রমেই জৌলুস হারিয়ে ফেলছে। বিপিএল খেলে বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারই আবার নিজেদের ফিরে পেয়েছেন, কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের ব্যাটাররা বিদেশীদের চেয়ে পিছিয়ে।
এ কারণে ২০১৯ সালে ক্রিকেটারদের আন্দোলনে একাধিক টি২০ আসর এবং বিশেষ করে কোনো বিদেশী ছাড়াই একটি টি২০ আসরের দাবি করেছেন। সেই সময় ভালো মানের উইকেট, ভালো মাঠ ও উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা দাবি করেন তারা।
কিন্তু দুইবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) টি২০ হয়েছে যা পরে আর হয়নি। এখন পিএসএল ও আবুধাবী টি১০ লিগে অনেক বাংলাদেশীর সুযোগ আসে। কিন্তু সেখানেও জাতীয় দলে যারা নিয়মিত তারা দেশের খেলা থাকার কারণে নিয়মিত খেলতে পারেন না।