ডায়াবিটিস নিয়ে আমাদের দেশে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। যদিও সারা বিশ্বে কমবেশি সব পরিবারেই ডায়াবিটিস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়, কিন্তু এ নিয়ে ভুল ধারণার বা Myth এর কোনো অন্ত নেই। সারা বাংলাদেশের প্রায় সত্তর লাখ লোক এই রোগে আক্রান্ত হলেও তাদের প্রায় অনেকেই জানেন না এই রোগটি নিরাময়যোগ্য নয়। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় মাত্র।





ডায়াবিটিস নিয়ে এরকম ৭টি ভুল ধারণা নিয়েই আজকে দেহ’র এই আয়োজন। যেসব ভুল তথ্য এই অতি পরিচিত রোগটিকে করে তুলেছে আরও ভয়াবহ। ‘মিথ বাস্টার’ এই পোস্টে আমরা খুলে দেবো এই রোগটি নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণার জট। তাহলে, আসুন জেনে নিই।





১. অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি বেশি খেলে ডায়াবিটিস হয় না
খুব কম মানুষই আছেন যারা জীবনে শোনেননি; ‘মিষ্টি বেশি খেয়ো না ডায়াবিটিস হবে’। আসলে এটি সর্বজন জ্ঞাত একটি ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার সাথে এর সরাসরি পরীক্ষিত কোন তথ্য নেই। আসলে ওজন বৃদ্ধি, পারিবারিক ইতিহাস এবং অন্যান্য কিছু বংশগত কারণ এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো ছাড়া মিষ্টি বেশি খাওয়ার সাথে এই রোগের যোগসূত্রটা একটি অতি প্রচলিত ভুল ধারণা।





২. ডায়াবিটিস রোগ ছোঁয়াচে নয়
আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে, এমনকি শহরেও অনেকে মনে করেন ডায়াবিটিস ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু আসলে এসব ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাস না করে যদি ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, এবং অবস্থা বিশেষে ওষুধ গ্রহণ করা হয় তবে এই রোগ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কোনো কারণ নেই।





৩. ডায়াবিটিস হলে মিষ্টি ফলও খেতে পারবেন
কোন কোন খাবার রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে সেটার একটি পরিমাপ রয়েছে। সেটা হলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। অধিকাংশ ফলেই আঁশ থাকে প্রচুর পরিমাণে। তাই ফল খাবার পরেও সেই শর্করা ধীরে ধীরে রক্তে মিশে বলে সেগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ততটা বেশি নয়। তাই ডায়াবিটিস ধরা পড়লেও মিষ্টিজাতীয় ফলও পরিমিত মাত্রায় খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।





৪. ইনসুলিন সারা জীবন ব্যবহার করতে হয় না
মানুষের অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নামক হরমোন রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই ইনসুলিন তৈরির মাত্রা কমে যায় তখনই রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই ডাক্তার যদি ইনসুলিন নেবার পরামর্শ দেয় তবে তার মানে এই না যে সারাজীবনই ইনসুলিন নিতে হবে। শরীর যখনই প্রয়োজন অনুপাতে ইনসুলিন তৈরি করতে পারবে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অতিরিক্ত ইনসুলিন না নিলেও হয়।





৫. ডায়াবিটিস রোগীরাও রক্ত দিতে পারেন
১৯ দশকের শেষের দিকে ইনসুলিন নেওয়া ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীরা রক্ত দিতে পারতেন না। কারণ তখন গোরু থেকে ইনসুলিন তৈরি হতো। পরবর্তীতে এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসায়, এই রোগীদেরও রক্তদানে কোনো বাধা নেই। তাই জরুরি রক্তের প্রয়োজনে ডায়াবিটিস আক্রান্ত ব্যক্তিও রক্ত দিতে পারবেন যদি তিনি অন্য কোনো সমস্যায় না ভোগেন।





৬. ডায়াবিটিসে আক্রান্তরা পরিশ্রম করতে পারেন
অনেকে মনে করে থাকেন যে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যতটুকু সম্ভব কম কায়িক পরিশ্রম করা উচিত। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা নয়। ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে প্রতিদিন হাঁটাচলা বা সীমিত পরিসরে হলেও ব্যায়াম করা উচিত। এই পরিশ্রমের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। আর এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করাও সহজ হয়।
৭. ডায়াবিটিস হলেও পছন্দের খাবার খেতে বাধা নেই
আমাদের অনেকেরই পছন্দের খাবারের তালিকায় উপরের দিকে থাকে বিরিয়ানি, মাংস, ভাজা-পোড়া। তবে রোগটি হলে এসব খাবার পরিহারের উপদেশ দেন অনেকে। কিন্তু অল্প তেলে, সীমিত মসলায় এবং পরিমিত পরিমাণে পছন্দের সব খাবারও খাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে মাত্রাটা যাতে বেশি না হয়। ডায়াবিটিস হলে এসব খাবার নিয়মিত না খেয়ে মাঝে মধ্যে খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।





পরিশেষে, ডায়াবিটিস হলে দৈনন্দিন জীবনে নিয়মের বাইরে যাওয়া চলবে না। একমাত্র সঠিক মাত্রায় খাওয়াদাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম এবং ঘুমই পারে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এছাড়াও ডায়াবিটিস সংক্রান্ত যে-কোনো সমস্যায় আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের সাথে। ‘দেহ’ টিম সবসময় আছে আপনাদের সেবায়।





আমাদের অনেকেরই পছন্দের খাবারের তালিকায় উপরের দিকে থাকে বিরিয়ানি, মাংস, ভাজা-পোড়া। তবে রোগটি হলে এসব খাবার পরিহারের উপদেশ দেন অনেকে। কিন্তু অল্প তেলে, সীমিত মশলায় এবং পরিমিত পরিমাণে পছন্দের সব খাবারও খাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে মাত্রাটা যাতে বেশী না হয়। ডায়াবিটিস হলে এসব খাবার নিয়মিত না খেয়ে মাঝে মধ্যে খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।