
টেস্ট ক্যারিয়ারটা থেমেছিল এই সেন্ট লুসিয়াতেই, এনামুল হক তখন ২২। তবে সাদা পোশাকের ক্যারিয়ারটা রঙিন করার সুযোগ এনামুল আরও একবার পাচ্ছেন। মাঝে পেরিয়েছে আট বছর। বিধাতার লীলাখেলাই বোধ হয়, প্রত্যাবর্তনের মঞ্চটা সেই সেন্ট লুসিয়াই!
প্রত্যাবর্তনের পেছনে নিজের সাফল্যের চেয়ে অন্যদের ব্যর্থতার ভূমিকাই অবশ্য বেশি। ২০২২ সালে টেস্ট দলগুলোর ভেতরে ব্যাটিং গড়ের বিবেচনায় বাংলাদেশই সবার নিচে, দলের তিন আর চার নম্বর ব্যাটার আস্থা জোগানোর বদলে হয়ে উঠেছেন বোঝা। একজন টানা ৯ ইনিংসে এক অঙ্কের রানে আউট হয়ে জীবন দিয়েছেন ১৩৪ বছর পুরোনো এক রেকর্ডকে। আর অন্যজন ফিফটির দেখা পাচ্ছেন না ১৭ ইনিংস ধরে। এনামুল একাদশে আসবেন তাঁদের একজনকে সরিয়েই।
২০১৫ সাল থেকে হিসাব করলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর রেকর্ড দুর্দান্ত। এই সময়ে যে তিনজন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান ৫০-এর বেশি গড় নিয়ে খেলেছেন, এনামুল তাঁদেরই একজন। কিন্তু কেবল এই মৌসুমটার হিসাব করলে এনামুল গড়পড়তা। জাতীয় ক্রিকেট লিগে রান করেছেন ৩৫ গড়ে, ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির অন্য আসর বিসিএলে সংখ্যাটা নেমে এসেছে ২৩-এ। তবু তাঁকে টেস্ট দলে ডেকে আনতে হলো উপায়ন্তর না পেয়ে। আর এনসিএল-বিসিএল তো গেল বছরের কথা, এই বছরে এনামুলের ব্যাটে তো রীতিমতো রানবন্যা।
শুরুটা বিপিএল দিয়ে। ‘ওঠ ছুড়ি, তোর বিয়ে’ স্টাইলে হয়ে যাওয়া বিপিএলটা একটা উপকার করে গেছে তাঁর, পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ক্রিকেটের প্রথম পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান রসের সঙ্গে। তাঁর টোটকাতেই যেন বদলে গেলেন এনামুল। প্রথমে বিপিএলে রান করলেন ২৮০। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগটাই হয়ে গেল দরজা ভাঙার চাবি। এক লিস্ট-এ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে ফিরলেন আলোচনায়। এখন তো প্রত্যাবর্তন হচ্ছে টেস্ট দলেই।
তবে সাদা বলের ক্রিকেটে সাফল্য পেলে কি লাল বলও জলবৎ তরলং হয়ে যায়? এমনিতে হয় না যদিও। এখন যেমন জস বাটলারকে বলা হচ্ছে লিমিটেড ওভারের সেরা ক্রিকেটার, অথচ টেস্ট দলে জায়গা পাকা করার চেষ্টায় খাবি খেয়ে বাদই পড়লেন শেষমেশ। এখনকার সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের চাহিদার তো পুরোই আকাশ-পাতাল ফারাক।
টেস্টের ব্যাকরণ বলছে, হাতটাকে শরীরের কাছাকাছি রাখতে, ‘করিডর অব আনসার্টেইনটি’র বলগুলো তাড়া না করতে, নরম হাতে খেলতে। কিন্তু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ‘ধরো-তক্তা-মারো-পেরেক’ ব্যাটিং করতে হলে হাতটাকে শরীর থেকে দূরে সরাতেই হবে; ব্যাট সুইংয়ের গতি বাড়াতে হবে, তার জন্য হাতটাকে ব্যাটের সাথে শক্ত করে চেপেও ধরতে হবে।
আর এনামুলের জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে, সেখানে টেস্ট খেলা হয় ডিউক বলে। বাংলাদেশের এসজি বলের চাইতে বলটা বেশি নড়াচড়া করে বাতাসে, সুইং করেও অনেকক্ষণ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের যেই মানসিকতা, সেই আক্রমণত্মক মানসিকতা নিয়ে টেস্টে সফল হওয়াটাও খুব কঠিন।