
গতকাল ওয়ানডে দলের সদস্যরা দেশ ছেড়েছেন। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য টেস্ট দলের সদস্যরা ঢাকা ত্যাগ করেন আজ শনিবার সকাল পৌনে ১১টায়। এর মধ্যে দুপুর নামতেই হঠাৎ চাঞ্চল্য মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রাঙ্গণে। দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিসিবিতে হাজির বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আর আলোচিত সাকিব আল হাসান। দুই জন বসেন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন বোর্ড পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী।





সাকিব-পাপনের বৈঠক চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা ব্যাপি। যেখানে মূল আলোচনা ছিল সাকিব আল হাসানের বিশ্রামের প্রসঙ্গ। দিন পাঁচেক আগে সাকিব সংবাদমাধ্যমকে জানান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে কিছুদিনের বিশ্রাম চান তিনি। পরে সেটি আমলে নেয় বিসিবি। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাকে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেয় ক্রিকেট বোর্ড। সেই বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা হয় আজ।
দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে আসলে কী আলোচনা হয় সাকিব-পাপনের মধ্য? বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমকে জানান বোর্ড সভাপতি পাপন।





* বিশ্রাম প্রসঙ্গ
সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর কিন্তু অনেক চাপ। আমাদের এ বছর ১৪টা ওয়ানডে, ১৫টা টি-টোয়েন্টি, ৮টা টেস্ট আছে। টানা এত খেলা তাদের জন্য আসলেই অসুবিধার। এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। এটা বুঝেই আমি বলেছিলাম। অনেকে মনে করে আমি রাগ করে বলেছি। রাগ করার কিছু নেই। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি- আসলেই খেলোয়াড়দের মাঝেমাঝে বিরতি দরকার। আমি একটা জিনিস অনেক দিন ধরে বলছি- যদি কেউ কোনো ফরম্যাট খেলতে না চায়, তাহলে আগে আগে বলে দিবে। কিন্তু সিরিজের আগমুহূর্তে বললে আমাদের জন্য বিরাট সমস্যা।





ধারাবাহিকভাবে যদি দেখেন… ও আমাকে প্রথমে বলেছে ছুটি চায়। তারপর বলল সে খেলবে। তারপর আবার বলল ও ফিট না। তারপর আবার বলল খেলব না। তারপর আবার বলছে খেলবে। ওর যে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে এটা তো বোঝাই যাচ্ছে। এখন আমরা ওকে সাপোর্ট করি। এখানে কোনো চাপ নেই, কিচ্ছু নেই। সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেলতে চাইলে অবশ্যই আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
* সাকিবকে তিন ফরম্যাটের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখা
আগের চুক্তি গত বছরই শেষ হয়ে গেছে। এ বছর আমরা কারও কাছ থেকে লিখিত নেইনি। এটা নিয়ে নিচ্ছি। এসব ব্যাপারেই ওর সাথে পুরো প্রোগ্রাম নিয়ে আলাপ হয়েছে। ও ওর একটা সিদ্ধান্ত আমাদের দিয়েছে।





* সাকিবের ছুটি প্রত্যাহার প্রসঙ্গে
সাকিব একটা ছুটি চেয়েছিল। তারপর তৃতীয় ওয়ানডের দিন বলেছিল সে খেলবে। দুবাই যাওয়ার আগে আপনাদের সাথে ব্রিফিং হয়, জালাল ভাইয়ের সাথে কথা হয় যে ও মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট না। ওখানে গিয়ে আমাকে বলল আমি আপনার সাথে এসে চূড়ান্ত করব, কিছু থাকলে এসে বলব। কিন্তু ওখান থেকে সে সিদ্ধান্ত নিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছে না। জালাল ভাই আপনাদের জানিয়েও দিল, আমরা ছুটি দিয়ে দিলাম।
পরশু এসে আমাকে ও যে জিনিসটা বলেছে- ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের সবারই কোনো না কোনো সময় এরকম হয়। মানুষ মেন্টালি ডিস্টার্বড থাকতেই পারে। আপনারা অনেক কারণ বের করে নিচ্ছেন- এটার জন্য, ওটার জন্য… এরকম কিছু না। যেকোনো মানুষেরই এমন জিনিস থাকতে পারে যেটা কেউ জানেই না। ও মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত এজন্য সিদ্ধান্ত নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সে নিজেই তো স্বীকার করেছে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছিল। এটা যখন বলেছে এরপর তো আর কোনো কথা নেই। আমাদের টোটাল প্রোগ্রাম দেখে বলেছে আমি সব ফরম্যাটে খেলতে চাই।





* সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা
আমার সাথে লম্বা আলোচনা হয়েছে এবং জানিয়েছে সে সব ফরম্যাট খেলতে ইচ্ছুক। এই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই। এটা আমাকে পরশু বলেছে। তারপর বলেছি তুমি বিশ্রাম নাও আজ, ঠাণ্ডা মাথায় ভাবো, ভেবে আমাকে জানাও। কাল আমাকে ফোন করে জানিয়েছে আমি আসলেই খেলতে চাই। আমি তারপরও তাকে সময় দিলাম, বললাম কাল বোর্ডে আসো। আজ বোর্ডে সবাই মিলে বসেছিলাম।
* ক্রিকেটারদের পাশে বিসিবি
একটা দুইটা সিরিজ যদি কেউ না করে, এটা নিয়ে এত হইচইয়ের কিছু নেই। এমনও হতে পারে বোর্ডও অনেক সিরিজে কাউকে রাখবে না, ড্রপ দিয়ে নতুন কাউকে যাচাই করতে পারি। অনেক খেলোয়াড় কোনো সিরিজে না-ও খেলতে পারে, তার অসুবিধা থাকতেই পারে। এটাকে আপনারা স্পোর্টিংলি নিন। এটা খেলারই অংশ। এটাই সারা পৃথিবীতে হয়ে আসছে। এই সময়টায় আমাদের সবার সাকিবকে সাপোর্ট দেওয়া উচিৎ। ওর সাথে থাকা উচিৎ, মানসিকভাবে শক্তি জোগানো উচিৎ। যে সমস্ত আলোচনা, টকশো হচ্ছে, আসলে এগুলো কারও জন্যই ভালো না। আমরা সবসময় ওদের পাশে আছি এবং সামনেও থাকব।
* সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছেন





দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিব সব ফরম্যাটে এভেইলেবল। কাল রাত সে যাবে। ওখানে তিনটা ওয়ানডে, দুটি টেস্ট। এমন হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট কোনো ম্যাচে ওকে ড্রপ করেছে। এমনও হতে পারে ও একটা ম্যাচে বিশ্রাম চেয়েছে। এটা নিয়ে এত হুলস্থূল করার কিছু নেই। আমার ধারণা সবই খেলবে। না খেললেও কোনো অসুবিধা নেই। ও যদি ওখানে গিয়ে কোনো ম্যাচে বিশ্রাম চায়, নিতে পারে।
* সাকিবের উপস্থিতিতে টিম স্পিরিট বাড়বে
দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা অন্যতম কঠিন সিরিজ খেলতে যাচ্ছি। কিছু দিন আগে উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ভারত হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছে। ওখানে গিয়ে জেতা অসম্ভব। আশা করছি আমাদের দল ভালো খেলবে। জিতলে তো খুশি হবই। নিউজিল্যান্ডে একটা জিতে এসেছি দেখে এখানে জিতে যাব এমন চিন্তাধারা ঠিক না। খেলতে খেলতেই ছেলেরা ভালো খেলবে। সাকিবের অন্তর্ভুক্তিতে টিম স্পিরিট বেড়ে যাবে।