
‘আমি এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অবস্থায় নাই।’ সাকিব আল হাসানের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই তাকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দিয়েছে বিসিবি। তাতে করে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে আর টেস্ট সিরিজই নয়, এবারের প্রিমিয়ার লিগও খেলা হচ্ছে না সাকিবের। কারণ আগামী ১৫ মার্চ শুরু ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের জমজমাট আসর প্রিমিয়ার লিগ। প্রথম পর্ব শেষে শীর্ষ ৬ দলকে নিয়ে হবে সুপার লিগ।





একসঙ্গে হোম অব ক্রিকেট শেরে বাংলা আর বিকেএসপি দুই মাঠ মিলে তিন মাঠে যেহেতু প্রতিদিন খেলা চলবে, তাই সব মিলিয়ে দেড় মাসের লিগ শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। সেই আলোকে বলা যায় এপ্রিলের ৩০ তারিখ নাগাদ হয়তো সুপার লিগও শেষ হয়ে যাবে। তার মানে সাকিবের পক্ষে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও খেলা সম্ভব নয়। সাকিব লিগ খেলতে না পারার অর্থ, তার দল মোহামেডানকে খেলতে হবে তাকে ছাড়া। সবার জানা, গতবার মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। এবার সাকিবকে ধরে রেখে মোহামেডান আগেই মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকার এবং মেহেদি হাসান মিরাজকে দলে টেনেছে।





মুশফিককে সাদা কালোদের এবারের অধিনায়ক মনোনীত করা হলেও সাকিব হচ্ছেন সাদা কালোদের সবচেয়ে দামি ও নামী ক্রিকেটার।
এখন প্রশ্ন হলো সাকিব যদি সত্যিই প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচও খেলতে না পারেন, তাহলে কী হবে? মোহামেডান তাদের সেরা ও সবচেয়ে কার্যকর পারফরমারকেই শুধু হারাবে? নাকি অন্য কোন ক্ষ’তির সম্মখিনও হবে? আজ সারাদিনই ক্রিকেট পাড়ায় এ কৌতুহলি প্রশ্ন উঁকিঝুকি দিচ্ছে অনেকের মনে। সবার একটাই প্রশ্ন, সত্যিই যদি সাকিব এবারের লিগ খেলতে না পারেন, তাহলে কি মোহামেডানের আর্থিক ক্ষতি হবে না?





সাকিবের পিছনে নিশ্চয়ই মোহামেডানকে বড় অর্থ গুনতে হয়েছে। পুরো পেমেন্ট না দিলেও সাকিবের মানের ক্রিকেটারকে পেতে অবশ্যই একটা বড়সড় অংকের অগ্রিম অর্থ দিতে হয়েছে মোহামেডানকে। এখন সবার কৌতুহলি জিজ্ঞাসা, সাকিবের সাথে আসলে পুরো লিগ কত টাকায় চুক্তি হয়েছিল মোহামেডানের? এবং দেশসেরা এই অলররাউন্ডারকে কী পরিমাণ অর্থ অগ্রিম দিয়েছে মোহামেডান? সে অর্থেরই বা কী হবে?
প্রথমেই বলে নেয়া ভাল, সাকিবের সঙ্গে আসলে কত টাকায় দফারফা হয়েছে মোহামেডানের, সে অর্থের পরিমাণ জানাতে রাজি হননি মোহামেডান কর্তাদের কেউই। মোহামেডানের অন্যতম পরিচালক ও অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা মাহবুব আনামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তবে মোহামেডান ক্লাবের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহকে পেতেই মোহামেডানকে ৬০ লাখ টাকার ওপরে গুনতে হয়েছে।





দুজনারই পেমেন্টে ৬০ লাখ টাকার ওপরে। এর মধ্যে মুশফিকের পেমেন্ট ৭০ লাখ। কারণ, আবাহনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে তাদের কাছে ওই অর্থ দাবি করায় আকাশী-হলুদ শিবির তাতে রাজি হয়নি। তথ্যটা আবাহনীর হেড কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের দেয়া। তিনি ক’দিন আগেই জানিয়েছেন, আমাদের (আবাহনীর) কাছে ৭০ লাখ টাকা দাবি করায় মুশফিককে রাখিনি। অর্থ্যাৎ, ওই পরিমাণ অর্থ দিতে রাজি হইনি। খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় মেহামেডান তার দাবি পূরণ করেছে বলেই মুশফিক আবাহনী ছেড়ে মোহামেডানে। ধরেই নেয়াই যায়, মুশফিক ৭০ লাখ টাকা পেলে সাকিব ৮০ লাখ পাবেন সেটাই স্বাভাবিক।





জানা গেছে সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ ও মিরাজকে একটা বড় ধরনের অগ্রিম অর্থ দেয়া হয়েছে এবং সেটা তাদের পারিশ্রমিকের প্রায় তিনভাগের একভাগ। কাজেই, ধরে নেয়া যায় সাকিব মোহামেডান থেকে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ পেয়েছেন।
মোহামেডান ক্লাবের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার কমে সাকিবকে পাওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। কাজেই ধরে নেয়া যায় সাকিব অগ্রিম বাবদ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পেয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো খেলতে না পারলে সেই অর্থের কী হবে? ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের রীতি সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের খুব ভাল জানা, বড় ক্রিকেটার ও শীর্ষ তারকারা সাধারনত অগ্রিম টাকা নিলে তা ফেরত দেন খুব কমই।
এখন সাকিব কী করবেন? সেটা তিনিই ভাল জানেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহামেডানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আসলে সাকিব কী করবে, খেলতে না পারলে অগ্রীম অর্থ ফেরত দেবে নাকি তা আগামী বছরের পেমেন্টের অগ্রীম হিসেবে গণ্য হবে- সেটা সাকিবের সাথে কথা বললেই বোঝা যাবে। তার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’
মোটকথা, সাকিবের সঙ্গে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টাকার চুক্তি ছিল মোহামেডানের। তার তিন ভাগের এক ভাগ কিংবা তারও কিছু বেশি অগ্রিম দেয়া হয়েছে। কাজেই একদমই খেলতে না পারলে সাকিবকে বাকি অর্থ ফেরত দেয়ার প্রশ্নই আসে না মোহামেডানের।
তবে ওই অগ্রিম অর্থ আর না পেলেও মোহামেডান কর্মকর্তারা যে মহা আফসোসে পুড়বেন, তাও নয়। কারণ ঢাকাই ক্লাব ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিকে অগ্রিম অর্থ বা সাইনিং মানি ফেরত দেবার নজির খুব কম। এখন সাকিব কী করবেন? সেটা তার ব্যাপার। এবার খেলতে না পারলে তিনি ওই অর্থকে আগামী বছরের অ্যাডভান্স হিসেবেও দেখতে পারেন।