
দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে খেলতে যাওয়া একসময় বাংলাদেশের জন্য ছিল ভিনগ্রহে অভিযানের মতো। সামান্য প্রাপ্তিও যেখানে হয়ে উঠত অনেক বড়। জয়ের ভাবনাই তখন থাকত না,স্রেফ লড়াই করার লক্ষ্য নিয়ে সফরে যেত দল। সেই সময়টা এখন সুদূর অতীত বলেই মনে করেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের কণ্ঠে প্রতয়ী উচ্চারণ, দক্ষিণ আফ্রিকায় কখনও জিততে না পারলেও এবার জয়ের লক্ষ্য ও বিশ্বাস নিয়েই যাবে দল।





দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৪ ওয়ানডে খেলে এখনও জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। শুধু ওয়ানডে নয়, ব্যর্থতার চিত্র সব সংস্করণেই। ৬ টেস্টে খেলে হারতে হয়েছে সবকটি। একমাত্র জয়টি এসেছে টি-টোয়েন্টিতে, ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এই সংস্করণে বাকি সব ম্যাচে সঙ্গী পরাজয়।এবার এই ইতিহাস বদলানোর লক্ষ্য নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার উড়ানে চেপে বসবে দল। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তামিম বললেন, কাজটা কঠিন হলেও চ্যালেঞ্জ জয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী। আমরা এমন একটা পর্যায়ে আছি ওয়ানডে ক্রিকেটে, জেতা ছাড়া অন্য কিছু বলাটা উচিত হবে না। অবশ্যই জয়ের লক্ষ্য নিয়েই যাব।





এটাও সত্যি যে, কাজটা কঠিন। ওখানে আমাদের রেকর্ড অতটা ভালো নয়। তবে রেকর্ড জিনিসটাই এমন যে, যেকোনো মুহূর্তে বদলাতে পারে। দারুণ উদাহরণ, নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট। যেখানে আমরা অনেকদিন কেনো সংস্করণেই ভালো খেলিনি। এবার তা পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমরা চেষ্টা করব যে রেকর্ডটা আমাদের দক্ষিণ অফ্রিকায় আছে, সেটা যেন পরিবর্তন করতে পারি।” আমরা সবাই জানি এটা চ্যালেঞ্জিং। ওদের কন্ডিশনে ওরা খুবই ভালো দল। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এমন নয় যে আমি বলে যাব ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই, যেটা হয়তোবা আজ থেকে ১০ বছর আগে বলতাম।





অবশ্যই জিততে চাই। এর জন্য যা যা করার দরকার, তা করব। তারপর যদি ফল পক্ষে আসে তো ভালো। না এলে আরও পরিশ্রম করব।” নিউ জিল্যান্ডের যে উদাহরণ তামিম দিলেন, সেটিই এখন দলের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। এই বছরের আগে নিউ জিল্যান্ডে তাদের বিপক্ষে ৩৩ ম্যাচ খেলে একটি মাত্র জয় ছিল বাংলাদেশের, স্রেফ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫ বিশ্বকাপে। নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে ৩২ ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই প্রাপ্তি ছিল পরাজয়। এবার সেই বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে গত জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানু্ই টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে অভাবনীয়ভাবে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ।





টেস্ট দলের সেই ইতিহাস গড়া জয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার ওয়ানডেতেও নতুন কিছু করতে চায় দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সিরিজটি আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। পয়েন্টের জন্য তাই নিজেদের তাড়না তুলে ধরলেন তামিম। নিউ জিল্যান্ডে যদি চিন্তা করেন, প্রায় ৩০-৩২ টা খেলায় আমরা কোনোদিন জিততে পারিনি। কিন্তু এবার দল তা বদলে দিয়েছে। আশা করছি, এই দলও এবার এটা বদলাতে পারবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। আমি সব সময় একটা বিষয় বিশ্বাস করি যে, আপনি মানসিকভাবে যদি তারতাজা থাকেন, যদি বিশ্বাসটা থাকে তাহলে অনেক কিছু করা সম্ভব।”





“আমার দল নিয়ে একটা কথা বলতে পারি, প্রত্যেকে বিশ্বাস করে ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব। আমি সব সময় পয়েন্টের কথা বলতে থাকি, কারণ এখন অনেক কিছু খেয়াল করতে হয়। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।
চোটের কারণে এবার নিউ জিল্যান্ডে যেতে পারেননি তামিম। ঐতিহাসিক ওই জয়ের অংশও হতে পারেননি। তবে সেই টেস্ট দলের লিটন কুমার দাস, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদুল হাসান জয়, ইবাদত হোসেন, ইয়াসির আলি ও শরিফুল ইসলামরা আছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ওয়ানডে দলে।





তামিমের চাওয়া, নিজেদের ওই বীরত্বের গল্প শুনিয়ে এবার তারা উজ্জীবিত করবেন ওয়ানডে দলকে।
“আমি নিউ জিল্যান্ডে ওই দলের সঙ্গে ছিলাম না দূর্ভাগ্যবশত। যারা ছিল, আমি চাইব তারা এসে কথা বলুক। ওই দলের অনেকেই ওয়ানডে স্কোয়াডে আছে। আমার ভালো লাগবে তারা যদি ওই ম্যাচটাকে নিয়ে কথা বলে, তাদের ভাবনা, প্রক্রিয়াগুলো, ওই সময়ে কী চিন্তা করছিল ঘুরে দাঁড়াতে…।”
“অধিনায়ক হিসেবে আমারই সব বলতে হবে, এমন নয়। প্রত্যেকেরই দায়িত্ব আছে। প্রত্যেকেই দলের একজন নেতা। ওই দলে যারা ছিল, তাদেরকে বলব সেসব নিয়ে যেন কথা বলে, তাদের মানসিকতা এবং সবকিছু নিয়ে। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো ফল পেতে সম্ভাব্য সব কিছু করব।