
একসময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ইউক্রেন স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৯১ সালে। স্বাভাবিকভাবেই এর আগে ইউক্রেনিয়ানরা ক্রীড়াক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়েই অংশগ্রহণ করত। সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রীড়াক্ষেত্রে ইউক্রেন ছিল বেশ প্রভাবশালী। বিশেষ করে ফুটবলের মাঠে ইউক্রেনিয়ানরা সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী। স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউরোপিয়ান ফুটবলেও ইউক্রেনের অবস্থান খুব একটা খারাপ নয়। অন্যদিকে ফুটবল পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভগ্নাংশ বর্তমান রাশিয়া হারিয়েছে কৌলীন্য। ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন ছাড়া তেমন সাফল্য নেই দলটির।





স্বাধীনতা লাভের পর ইউক্রেন প্রথম ইউরোতে খেলার সুযোগ পায় ২০১২ সালের আসরে। তবে তার জন্য তাদের বাছাইপর্ব পেরোতে হয়নি। স্বাগতিকদের একজন হিসেবে সেই আসরে সুযোগ পেয়ে অবশ্য গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় তারা। এর পর আরও দুবার ইউরো খেলেছে ইউক্রেন। ২০১৬ ও ২০২০-এর আসরে খেলে ইউক্রেনের সর্বোচ্চ সাফল্য আসে ২০২১ সালে হওয়া ২০২০ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে ইউক্রেন। কোয়ার্টার ফাইনালে হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড দলের কাছে ৪-০ গোলে উড়ে যায়।





বিশ্বকাপে রাশিয়া প্রথম খেলে সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসেবে ১৯৫৮-র সুইডেনে অনুষ্ঠিত আসরে। এর পর আরও সাত আসরে খেলে লেভ ইয়াসিনের দলের সর্বোচ্চ সাফল্য ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান পাওয়া। ফিফার দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাকসেসর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রাশিয়াসোভিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর খেলেছে ৪টি বিশ্বকাপ। তাতে সর্বোচ্চ সাফল্য আসে ২০১৮-র বিশ্বকাপে। স্বাগতিক রাশিয়া সেবার চমক দেখায় কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে।





সোভিয়েতের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন ইউক্রেনিয়ান বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলেও স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউক্রেন প্রথম বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা লাভ করে ২০০৬-এর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত আসরে। সে আসরে স্পেনের কাছে ৪-০ গোলে উড়ে গিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করা শেভচেঙ্কোর দল শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল। এর পর আর কখনো তারা বাছাইপর্বের বাধা পার করতে পারেনি।





ক্লাব ফুটবলে ইউক্রেনিয়ান ক্লাবগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের টপ লিগে বেশ প্রাধান্য দেখিয়েছিল। রাশিয়ার পাঁচ ক্লাব মিলে যেখানে ৩৪ বার লিগ জয় করেছিল, সেখানে ইউক্রেনের তিন দল মিলে ১৬ বার লিগ জয় করে। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলে সর্বোচ্চবার লিগজয়ী ক্লাবটি ইউক্রেনের। সোভিয়েত লিগে দুই রাশান জায়ান্ট ডায়নামো মস্কো ও স্পার্তাক মস্কোর যথাক্রমে ১২ ও ১১ লিগ শিরোপার বিপরীতে ইউক্রেনিয়ান জায়ান্ট ডায়নামো কিয়েভের লিগ শিরোপার সংখ্যা তৎকালীন লিগ রেকর্ড ১৩টি!





সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও ডায়নামো কিয়েভ, শাখতার দোনেৎস্ক ইউরোপিয়ান লিগে নিয়মিত খেলছে। ডায়নামো কিয়েভম পেয়েছে ইউরোপিয়ান শিরোপার স্বাদও। কিয়েভের দলটির শোকেসে শোভা পাচ্ছে একটি ইউরোপিয়ান কাপ ও দুটি ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপের শিরোপা।
ব্যক্তিগত পর্যায়েও ইউক্রেনের ফুটবলাররা পেয়েছেন সাফল্যের দেখা। এ পর্যন্ত তিনজন ইউক্রেনিয়ানের সৌভাগ্য হয়েছে ব্যালন ডি’ওর জয়ের। অবশ্য এদের দুজনই ব্যালন ডি’ওর জয় করেছেন সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে। ডায়নামো কিয়েভের কিংবদন্তি ওলেগ বলখিন সর্বপ্রথম ব্যালন ডি’ওর জয় করেন ১৯৭৫ সালে। দ্বিতীয় ব্যালন ডি’ওর জয়ী ইগর বেলানভও খেলতেন কিয়েভের বিখ্যাত ক্লাবটিতেই। তিনি ব্যালন ডি’ওর পান ১৯৮৬ সালে। ২০০৪ সালে ব্যালন ডি’ওর জয় করেন আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো। স্বাধীন ইউক্রেনের পক্ষে একমাত্র তিনিই ব্যালন ডি’ওর জয় করেন। ইতালির বিখ্যাত ক্লাব এসি মিলানের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার শেভচেঙ্কো এসি মিলানের হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। অন্যদিকে একমাত্র রাশিয়ান হিসেবে ব্যালন ডি’ওর জয় করেন সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে খেলার সময় ১৯৬৩ সালে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’ওর জয় করেন। তিনিই একমাত্র গোলরক্ষক, যিনি এই পুরস্কার জিতেছেন।