
বাংলাদেশে আসার আগে থেকেই তিনি বেশ রোমাঞ্চিত। একে তো পুরোনো জায়গায় ফিরছেন, সেই পুরোনো জায়গায় নিশ্চয়ই কাজ করার জন্য মিলে যাবে নতুন এক দল, নতুন ক্রিকেটারও। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেমি সিডন্সই বলেছিলেন তাঁর সেই অধীর অপেক্ষার কথা।





বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষা। ঢাকায় এসে বিপিএলের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় অপেক্ষা কিছুটা দীর্ঘ হয়েছে। তবে চট্টগ্রামে এসে অবসান হয়েছে সিডন্সের সব অপেক্ষারই। বাংলাদেশ দলের নতুন ব্যাটিং কোচ হিসেবে চট্টগ্রামেই তিনি কাজ শুরু করেছেন; চট্টগ্রামেই দেখছেন নতুন ছাত্রদের, দেখছেন পুরোনোদেরও নতুন করে। সিডন্সের সেই দেখায় শুরুতেই দারুণ বিস্ময় হয়ে এসেছেন





জাতীয় দলের দুই তরুণ ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া প্রথমজন এরই মধ্যে জাতীয় দলের হয়ে খেলে ফেলেছেন ৩১টি টেস্ট, ৫৩টি ওয়ানডে আর ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ২০১৮ সালে অভিষেক হওয়ার পর দ্বিতীয়জন খেলেছেন এখন পর্যন্ত ৮টি ওয়ানডে আর ৩৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তবু বয়সে দুজনই এখনো তরুণ, সিডন্সের কাছে তো নতুনও।





কাল এই দুই ব্যাটসম্যানের বীরোচিত ব্যাটিংয়েই চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানেডেতে ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ২১৫ রানের জবাব দিতে নেমে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর জয়টাকে যখন অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল, তখন সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে সপ্তম উইকেটে মিরাজ-আফিফের অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের রেকর্ড জুটিই। ম্যাচ শেষে মিরাজের নামের পাশে অপরাজিত ৮১ রান আর আফিফের রান অপরাজিত ৯৩।





বাংলাদেশ দলের দুই তরুণের এমন বিস্ময়কর ব্যাটিং জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে বসেই দেখেছেন জেমি সিডন্স। প্রথম আলোকে সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে যেন আরেকবার রোমাঞ্চিত তিনি, ‘একসঙ্গে দুজন ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে আমি অনেক দিন পর এমন নিখুঁত ব্যাটিং দেখলাম। ও রকম একটা কঠিন সময়েও মাথা ঠান্ডা রেখে কী দারুণ হিসাবি ব্যাটিং করল তারা! এক





টাও বাজে শট নেই। অনেক দিন পর দেখলাম এ রকম কিছু।’অনেক দিন পরই নয় শুধু, মিরাজ-আফিফ জুটি কাল যে ব্যাটিংয়ের অনুপম প্রদর্শনী দেখাল, সেটি একদিক দিয়ে ক্রিকেটের ইতিহাসেই প্রথম। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সপ্তম উইকেট জুটিতে তাদের অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানই যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ! ম্যাচের ও রকম ক্রান্তিলগ্নে নেমে আর কোনো জুটিই সপ্তম উইকেটে কখনো এত রান করতে পারেনি। প্রথম ওয়ানডের আগে চট্টগ্রামে এসে মাত্র এক দিনই দলের সঙ্গে অনুশীলনে ছিলেন সিডন্স।





কিন্তু নেটে এক দিনের ব্যাটিং দেখে ক্রিকেটারদের আর কতটুকুই-বা চেনা যায়! বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং সামর্থ্য দেখার সুযোগটা সিডন্স তাই কিছুটা পেয়েছেন আসলে কালকের ম্যাচেই। তাতে দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যান, যাঁরা তাঁর পুরোনো ছাত্র, তাঁরা হয়তো সন্তুষ্ট করতে পারেননি এবার ব্যাটিং কোচ হয়ে আসা বাংলাদেশ দলের সাবেক প্রধান কোচকে। তবে সব মিলিয়ে সিডন্সের কথায় সন্তুষ্টিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণেরা তো তাঁকে এ রকম বিস্মিতই করেছে,





‘দলের তরুণ ব্যাটসম্যানদের প্রতিভা দেখে আমি ভীষণ মুগ্ধ। ওদের সঙ্গে আরও বেশি কাজ করতে মুখিয়ে আছি আমি। এটা নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত বলতে পারেন। সঙ্গে বড় যারা আছে, তাদের নিয়ে তো কাজ করবই।’ বাংলাদেশে সিডন্সের নবযাত্রা শুরু হলো রোমাঞ্চকর এক জয়ে। সেই জয়ও আবার এল তরুণদের হাত ধরে। নতুন দায়িত্ব তাঁর কাজটা তো মূলত হবে এই তরুণ ব্যাটসম্যানদের নিয়েই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটা জয় দিয়ে শুরু হওয়ায় তাই একটু বেশিই চওড়া হচ্ছে সিডন্সের হাসি।