
নব নবীনের গাহিয়া গান সজীব করিব মহাশ্মশান, আমরা দানিব নতুন প্রাণ বাহুতে নবীন বল! আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটা গুনগুন করে গাইতেই পারেন বাংলাদেশের সমর্থক কিংবা ক্রিকেটবোদ্ধারা।





অথচ কি ভয়ংকর শুরুটাই না হয়েছিল টাইগারদের। ২১ বছর বয়সি ফজল হক ফারুকির সুইংয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের টপ অর্ডার। মাত্র তিন বলের ব্যবধানে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস।





বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মিনিস্টার ঢাকার হয়ে তামিমের সঙ্গে খেলেছেন ফারুকী। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের কল্যাণেই বিপিএলে খেলার সুযোগ মিলেছিল বাঁহাতি এই পেসারের। প্রায় মাসখানেক নেটে অনুশীলন করলেও সেই পেসারের সুইংয়েই পরাস্ত তামিম। তিনে নামা সাকিব আল হাসান ফিরেছেন বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলা মুজিব উর রহমানের বলে কাট করতে গিয়ে। মুশফিকুর রহিমকে ফারুকি ফেরালেও আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিজের শিকার বানিয়েছেন রশিদ খান।





অভিষেক রাঙাতে পারেননি ইয়াসির আলী রাব্বিও। তাতে মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর ফলে তখন বাংলাদেশকে চোখ রাঙানি দিচ্ছিলো বড় হার। জহুর আহমেদে চৌধুরি স্টেডিয়ামে যেন উঁকি দিচ্ছিলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালে টেস্ট হারের স্মৃতি। তবে সেই গল্পের পুনরাবৃত্তি করতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ এবং আফিফ হোসেন ধ্রুব।





৫৮ বলে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ে শুরুর বিপর্যয় সামলে নেন এই দুই তরুণ। ২১৬ রানের সহজ লক্ষ্য একটা সময় অনেকটা দূরে মনে হলেও মিরাজ-আফিফের ব্যাটিংয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো বাংলাদেশকে। টাইগারদের হয়ে এর আগে সাত ওয়ানডে খেললেও কখনও পঞ্চাশ ছোঁয়া হয়নি আফিফের। তবে ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে ৬৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তরুণ এই অলরাউন্ডার।





আফিফকে সঙ্গ দেয়া মিরাজও ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ রানের ইনিংস। ইয়ামিন আহমেদজাইকে পুল শটে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি করার সঙ্গে পেরিয়ে যান আগের ক্যারিয়ার সেরা ৫১ রান। এর পরের গল্পটা কেবল আফিফ-মিরাজের, গল্পটা বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে দুই তরুণের দাপটের। শেষ পর্যন্ত ১৭৪ রানের অনবদ্য জুটিতে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য চার উইকেটের জয় এনে দেন আফিফ ও মিরাজ।





সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের তো বটেই এশিয়ার কোনো দলেরও সর্বোচ্চ জুটি। এমন ইতিহাস গড়ার দিনে জস বাটলার এবং আদিল রশিদের ১৭৭ রানের জুটিকে পেরোতে না পারার আক্ষেপ মিরাজ-আফিফকে পোড়াতেই পারে। এমনকি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেও পর্যাপ্ত রান না থাকায় সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি আফিফ-মিরাজের। তবে ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে যে অকল্পনীয় জয় এনে দিয়েছেন তাতে প্রশংসায় ভাসছেন তারা দুজন।





ম্যাচ শেষে সমর্থকদের পাশাপাশি প্রশংসা ঝড়েছে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কণ্ঠেও। অথচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলেই থাকার কথা ছিল না আফিফ-মিরাজের। দল ঘোষণার আগে আফিফ-মিরাজের জায়গায় অন্য ক্রিকেটারের নাম ছিল বলে জানিয়েছেন পাপন। প্রেসিডেন্টস বক্সে বসে পাপনকেও ভাবিয়েছে মিরাজ-আফিফ জুটি। ম্যাচ শেষে তাদের দুজনের স্কোয়াডে থাকা না থাকা নিয়ে পাপন বলেন,





‘আমি এটা এখন নামার সময় বলছিলাম। পরশু দিনও কিন্তু এরা খেলবে যে এই জিনিসটা নিশ্চিত ছিল না। স্কোয়াডে এরা খেলবে কী না এটা কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এখানে অন্য নামও ছিল। কিন্তু বিকল্প তো আমাদের আছে। কিন্তু চিন্তা করছি যদি এরা না খেলতো কী হতো।’