ঝরে যেতে পারতেন প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই। বড় খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নে যেই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপিত) ভর্তি হয়েছিলেন আফিফ, সেখান থেকে আইন ভঙ্গের জন্য হন বহিষ্কার।
তবে ব্যাট-বলের মধুময় প্রেমে আচ্ছন্ন আফিফ হাল ছাড়েননি। জরিমানা দিয়ে আবার ভর্তি হন বিকেএসপিতে। বাকি গল্প তো সবারই জানা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপাণ্ডবের অবদান অনস্বীকার্য। তবে বয়সের ভারে কিংবা বাস্তবতা মেনে ধীরে ধীরে পঞ্চপান্ডব অধ্যায় গোধূলি লগ্নে। মাশরাফি বিন মর্তুজা তো অঘোষিত অবসরে।
আস্তে আস্তে প্রকৃতির নিয়ম মেনে সাকিব তামিম মুশফিক মাহমুদউল্লাহরাও একদিন ধরবেন সেই পথ।
আফিফ হোসেন ধ্রুব, জন্ম: ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯, রোল: ব্যাটিং অলরাউন্ডার, ব্যাটিং স্টাইল: বাঁহাতি মিডল অর্ডার , বোলিং স্টাইল: ডানহাতি অফব্রেক, টি-টোয়েন্টি অভিষেক: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮ বনাম শ্রীলঙ্কা।
আর ঘটনাবহুল এই অধ্যায় শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যারা প্রতিনিধিত্ব করবেন তাদের মধ্যে প্রথম দিকেই নাম আসে তরুণ আফিফের। পঞ্চপান্ডবের ছায়ায় এখন যিনি অনেকটা পরিণত, প্রতিষ্ঠিত।
এবারই প্রথম বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। খুলনায় জন্ম হলেও এই বাঁ-হাতির বেড়ে ওঠা বিকেএসপিতে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন।
যদিও বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলেছিলেন খুলনার হয়ে। পরবর্তীতে খুলনার বিভাগীয় দল, বাংলাদেশ যুব দল এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) আলো ছড়ালে জাতীয় দলের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায় তার জন্য।
টি-টোয়েন্টি দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফিফের অভিষেক। তবে প্রথম ম্যাচেই ডাক উপহার পেয়েছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ভুলে যাওয়া ম্যাচের পর বাদ পড়ে গিয়েছিলেন। তবে যখন ফিরলেন, জাতীয় দলের জায়গা একদম পাকাপোক্তই করে ফিরলেন।
এই ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত আফিফের সেরা ইনিংস জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৯ সালে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাত্র ২৬ বলে তার ৫২ রানের দুর্দান্ত ওই ইনিংসটি এসেছিল মারাত্মক চাপের মুখে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেদিন মাত্র ৬০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়েছিল টাইগার। ম্যাচটি জিততে তখনো স্বাগতিকদের প্রয়োজন ছিল আরও ৮৫ রান।
চাপের সেই মুহূর্তেই জ্বলে ওঠে আফিফের ব্যাট। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পারলেও তার ওই ইনিংস বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়।
বোলিংটাও বেশ ভালোই পারেন আফিফ। পার্ট-টাইম অফ-স্পিনার হলেও, দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেয়ায় সিদ্ধহস্ত তিনি। পারেন প্রতিপক্ষের রানরেট চেপে ধরতে। তবে তার শক্তির জায়গা অবশ্যই ব্যাটিং।
২৮ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত আফিফের রান ৩৭৩। গড়ও গড়পড়তা, ১৮.৬৪। ১২৩.৫০ স্ট্রাইকরেট মন্দ নয়। তবে এসব সংখ্যা ম্লান তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের কারণে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা সাহসীদের। পাওয়ার কিংবা পিঞ্চ হিটিংয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করার। আফিফ সেরকমই। দেখতে লিকলিকে হলেও বড় শট খেলার দারুণ এক ক্ষমতা আছে তার মধ্যে।
ক্ষমতা আছে যেকোনো মুহূর্তে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার। আফিফের সেই ক্ষমতাটা এবার বিশ্বমঞ্চেও দেখতে চাইবে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের আপামর ক্রিকেট ভক্তকূলও।