না, কোনো বাঁধনেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বেঁধে রাখা গেল না। নিজের ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচেই চলে গেলেন টেস্ট থেকে অবসরে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের অনুরোধও রাখেননি। শেষ ম্যাচে দলকে রেকর্ড জয় উপহার দিয়েছেন।
ব্যাট হাতে খেলেন সাদা পোশাকে ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রানের ইনিংস। তাই সবারই এক কথা, দেশকে আরো দিতে পারতেন রিয়াদ। তবে সকলেই জানেন দীর্ঘদিন জমে থাকা অভিমানেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে দেশের ক্রিকেটে।
রিয়াদের এমন বিদায়ের জন্য সোজা অভিযোগের আঙুলটা যাচ্ছে নির্বাচকদের দিকে। বিশেষ করে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এ দায় এড়াতে পারবেন না বলেই মনে করেন দেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জাতীয় দলের সাবেক তারকা তুষার ইমরান। তিনি বলেন, ‘শেষ ১০ টেস্টে রিয়াদের গড় ৫৪। সে কীভাবে বাদ পড়ে আমার মাথায় ঢোকে না।
ওকে অনেক আগেই দলে ফেরানো দরকার ছিল। তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টগুলো আমরা হারতাম না। ওর অভিজ্ঞতা কাজে লাগতো। কিন্তু নির্বাচকরা ওকে দলে টানেনি। এত ভালো পারফরম্যান্সের পরও ১৭ মাস ওকে দলের বাইরে রাখে। এবারও শুরুতে স্কোয়াডে ছিল না।
তামিম ও মুশফিকের ইনজুরি না থাকলে ডাকাও হতো না মনে হয়। আমার ধারণা এই অবহেলাটাই ওকে অবসর নিতে বাধ্য করেছে।’ অন্যদিকে দেশের তারাকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন রিয়াদের অবসরের সিদ্ধান্ত সঠিক।
২০২০ এর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে শেষ টেস্ট খেলেন রিয়াদ। এরপর তাকে আর দলে ডাকা হয়নি। জিম্বাবুয়ে টেস্টের দলেও প্রথমে ডাক পাননি তিনি। দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় মূল স্কোয়াড ঘোষণার দিন দুয়েক পর। এই ১৭ মাস কেন তাকে দলের বাইরে রাখলেন নির্বাচকরা তা বুঝতে পারছেন না দেশের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির মালিক তুষার।
তিনি বলেন, ‘সামর্থ্য দেখতে হবে। কেউ যদি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে রান করতে পারে তাহলে টেস্টেও পারবে। তামিম ইনজুরিতে না পড়লে এই ম্যাচে রিয়াদ সুযোগ পেত না। এখন পারফরম্যান্স করে বুঝিয়ে দিয়েছে সে ফিট কি না। তাই সে নিজেকে চিনিয়ে দিয়ে অবসর নিয়েছে। সবার আগে তাই পারফরম্যান্সই দেখা উচিৎ। আর সেটি নির্বাচকরা কেন দেখেন না তা আমি বুঝি না। নয়তো রিয়াদকে এত মাস দলের বাইরে রাখার কারণ কী?’
তুষার নিজেই এমন অবহেলার শিকার। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩২টি সেঞ্চুরি করলেও তাকে সুযোগ দেয়া হয়নি জাতীয় দলে। তিনি সরাসরি প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে দায়ী করে বলেন, ‘এমন অবহেলা তো আমার সঙ্গেও হয়েছে। বছরের পর বছর রান করেছি।
কিন্তু একটা বারও সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রাধান নির্বাচক নান্নু ভাইতো কথাই বলেনি কোন দিন আমার সঙ্গে। আমি রান করলেই ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতো। কিন্তু একই উইকেটে রান করা অন্যরা পেতো জাতীয় দলে সুযোগ। আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতো। না পারলে কথা বলতে পারতো।
আর জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল মনে করেন রিয়াদের সিদ্ধান্তে কোন ভুল নেই। দীর্ঘ দিন পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া রিয়াদ হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাছে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন পরম আকাঙ্ক্ষিত জয়। ক্রিকেট ইতিহাসে রিয়াদই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি অভিষেক টেস্টে বল হাতে ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন, আর বিদায়ী টেস্টে হাঁকিয়েছেন দেড়শ। আশরাফুলের মতে, ফর্ম এরকম তুঙ্গে থাকাকালেই বিদায় বলা উচিৎ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যতদিন ক্রিকেট থাকবে ততদিন তার নাম থাকবে- এমন একজন ক্রিকেটার ছিলেন যিনি অভিষেকে ৫ উইকেট পেয়েছেন বিদায়ী ম্যাচে ১৫০ করে অপরাজিত ছিলেন। তার সিদ্ধান্ত সঠিক। ওর জায়গায় থাকলে আমিও এভাবে চিন্তা করতাম। চিন্তা করেছে- লাল বলে আমার ক্যারিয়ার হয়তো আর এক-দেড় বছর। যেহেতু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বেশি মনোযোগ, স্বাভাবিক।